নিউজ স্বাধীন বাংলা : পরিবহস সেক্টরের চাঁদাবাজি নতুন কিছু নয়। যখন যার ক্ষমতা তখন সে বা তার লোকজনই মেতে উঠে চাঁদাবাজিতে। আর এই চাঁদাবাজদের চাহিদা পূরণ করার জন্য যে টাকা দিতে হচ্ছে তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে যাত্রীদের কাছ থেকে রাখা হয় অতিরিক্ত ভাড়া অথবা কোনো কারণ ছাড়াই পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়।
বহু আগের থেকেই নারায়ণগঞ্জের পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজির দাবি তোলা হয়েছিলো। বলা হয়েছিলো, এখানকার চাঁদাবাজি যদি বন্ধ করা যেত তাহলে পরিবহন ভাড়া আরও অনেক কমে আসতো। কিন্তু চাঁদাবাজরা ক্ষমতাসীন। প্রশাসনের থেকেও তারা বেশি ক্ষমতাধর (?) তাই হয়তো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলশ্রুতিতে নারায়ণগঞ্জ থেকে ৩৭ টাকায় সাধারণ মানুষকে ঢাকায় যেতে হয়। অথচ এই ভাড়া সর্বোচ্চ ত্রিশ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু চাঁদাবাজদের কারণে সে আর সম্ভব হয়ে উঠেনি।
এদিকে সম্প্রতি র্যাব-১১ পরিবহন চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে। ফলশ্রুতিতে গত ১৫ দিনে অন্তত ১১ জন পরিবহন চাঁদাবাজকে আটক করেছে তারা। এখানে সরকারি দলের লোকজনও ছিলো। তবে, রাঘবোয়াল টাইপ কোনো চাঁদাবাজ এখনও র্যা বের জালে ধরা পড়েনি। যার কারণে পরিবহন মালিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা বেড়েছে র্যা বের কাছে। তারা চায়, পরিবহন সেক্টরের রাঘবোয়াল চাঁদাবাজদের আটক করা হোক।
তবে, র্যাব পরিবহন চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে যে ধরণের অভিযান চালাচ্ছে এতেও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মালিক ও শ্রমিক এ প্রতিবেদকে বলেন, এ খাতে আয়ের বড় একটি অংশ চলে যায় চাঁদাবাজদের পকেটে। সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা এসব চাঁদাবাজিতে যুক্ত। যখন যে সরকার আসে তখন সে দলের নেতাকর্মীরা পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজিতে মেতে উঠে। পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির পেছনে চাঁদাবাজি অনেকাংশে দায়ী।
তারা আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি বন্ধে র্যা ব ১১ যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। তবে, যে ধরণের চাঁদাবাজদের ইতোমধ্যে আটক করা হয়েছে তাদের থেকেও আরও অনেক বড় বড় চাঁদাবাজ রয়েছে নারায়ণগঞ্জে। যাদের কারণে পরিবহন বিশেষ করে যাত্রীবাহি বাসে চড়ার জন্য সাধারণ মানুষকে দিতে হয় অতিরিক্ত ভাড়া।
সাধারণ মানুষের মতে, পরিবহন সেক্টরের চাঁদাবাজি বন্ধ করা সম্ভব হলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সহ প্রায় সকল প্রকার পরিবহনের ভাড়া অনেক কমিয়ে আনা যাবে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিলো র্যাব-১১ এর সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিনের সাথে। তিনি নারায়ণগঞ্জ টুডে’কে বলেন, বাস ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি ভোক্তা অধিকারের মধ্যে পড়ে। তারপরও পাবলিক ডিমান্ড যদি থাকে, আমরা এই চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেব। অভিযান চালাবো।
প্রসঙ্গত, গত এক মাসে অন্তত ৪৩ জন পরিবহন চাঁদাবাজকে আটক করেছে র্যাব-১১। পৃথক পৃথক অভিযানে তাদেরকে চাঁদাবাজিকালে হাতে নাতে আটক করা হয়। আটকদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়েরের মাধ্যমে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এরমধ্যে ৩১ মে সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড ও শিমরাইল মোড়ে অভিযান চালিয়ে ১৩ জন পরিবহন চাঁদাবাজকে আটক করে র্যা ব-১১।
আটকরা হলেন- মো. শরিফ (৩০), সৈয়দ আহসান উদ্দিন ওরফে জুয়েল (৩৬), জলিল মিয়া (৪২), মো. মাসুদ (৩৬), মো. সিদ্দিক (২০), ফারুক হোসেন (৬৩), শফিকুল ইসলাম (৩০), সোরাব হোসেন সর্দার (৭০), রিপন শিকদার (৩৫), সাকিল ইসলাম ভু্ইয়া (২৪), সোহেল (২৬), মো. মাসুদ ওরফে হাবিব (৩২) ও মাহমুদুন নবী অপু (২৬)।
এছাড়া ৩ জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের চাঁদাবাজ চক্রের ১৯ জনকে আটক করা হয়। এদিন ভোর থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর, মদনপুর এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানার শিমরাইল এলাকায় মহাসড়কে চাঁদাবাজির সময় তাদের আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির এক লক্ষ ছয় হাজার টাকাও জব্দ করে র্যাব।
আটকরা হলেন, মোশারফ, শামীম, রাব্বী ওরফে বাবর, খোরশেদ আলম ইমন, কাজী এরশাদুজ্জামান, আবদুল কাদের সুমন, জাহাঙ্গীর আলম, আলমগীর হোসেন, আবদুস সালাম, জিয়াউর রহমান, মাহফুজুর রহমান, মহসিন মিয়া, মনসুর আলী, আরশাদ মোল্লা, জহুর আকন্দ, ওমর ফারুক, হুমায়ুন কবীর, হাসান কাউছার এবং মনিরুল ইসলাম।
২৫ জুন সন্ধ্যায় চিটাগাং রোড এলাকায় চালানো হয়। চাঁদাবািজকালে হাতে নাতে সেখান থেকে তিনজনকে আটক করা হয়। তারা হলো, শামীম, ইকবাল ও রাকিব।
২ জুলাই চিটাগাং রোডের শিমরাইল মোড়ে। বিভিন্ন পরিবহন থেকে চাঁদা তোলাবস্থায় র্যাব সেখান থেকে চার জনকে আটক করে। তারা হলেন- স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা সামাদ বেপারী, জাসদ (ইনু) নেতা মাসুদ রানা, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জহিরুল হক ও ইলিয়াস মোল্লা। ৬ জুলাই সন্ধায় সোনারগাঁয়ের কাজি ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজের সামনে চালানো হয়। সেখান থেকে অটক করা হয় দু’জনকে। এরা হলেন, দর্পন পাটোয়ারী ও আফসার উদ্দিন। ৮ জুলাই বেলা সোয়া ১১ টায় সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরে। সেখান থেকে আটক করা হয় দু’জনকে। তারা হলেন, মামুন ও ইয়াসিন।