মোঃ ওয়ারদে রহমান: গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সারাদেশের মত নারায়ণগঞ্জে হরতাল পালন করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। পুলিশ প্রশাসনের টহলের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। এতে করে প্রথামিক অবস্থায় স্বাভাবিক জীবন যাপনে নগরবাসীকে কোন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি।
রোববার (৭ জুলাই) সকাল থেকে শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ব্যানারে হরতাল পালন করেছে বাম জোটের নেতাকর্মীরা। বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা দেশব্যাপী অর্ধ দিবস হরতাল সফল করতে রাজপথে নামে বাম ঘরানার বিভিন্ন রাজনীতিক দল।
দেখা যায়, ভোর সকাল থেকেই বাম দলের নেতাকর্মীরা বাম গণতান্ত্রিক জোটের ব্যানারে হরতাল পালনে পথসভা ও মিছিল শুরু করে। শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে তাদের সবচেয়ে বেশি পথসভা ও মিছিল করতে দেখা গেছে। এদিকে পুলিশ প্রশাসন তাদের টহল অব্যাহত রেখেছে। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কিছুদূর পর পর তাদের টহল টিম খন্ড খন্ড হয়ে হরতালে নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবন যাপন নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করেছে।
জানা গেছে, সকাল থেকে হরতালের কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। তবে ভোর থেকে শহরের রাস্তাঘাটে চলাচল করেছে বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, রিকশা, অটোরিকশা, ইজি বাইক ও থ্রি-হুইলার। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোতায়েন ছিল পুলিশ। হরতাল থাকলেও সকাল থেকেই শহরের চাষাঢ়া এলাকায় চিরচেনা যানজটের দৃশ্য দেখা যায়। বিভিন্ন পরিবহনের বাসগুলো যাত্রী বোঝাই করে রাজধানীর দিকে যেতে দেখা গেছে। চাষাঢ়া এলাকার সিএনজি স্ট্যান্ডগুলোর চিত্রও অন্য দিনের মতো স্বাভাবিক ছিল। ট্রেন স্টেশনেও যথা সময়ে ট্রেন চলাচল করছে। যাত্রী সংখ্যার অন্যান্য দিনের মত স্বাভাবিক ছিল। অন্যদিকে নৌ রুটে লঞ্চ চলাচল অন্যান্য দিনের মত স্বাভাবিক ছিলো। এমনকি পথচারীরাও পায়ে হেঁটে চলতে কোন ধরণের হয়রানিতে পড়তে হয়নি। কিন্তু প্রথম দফায় মিছিল বের করলেও দ্বিতীয় দফায় পুলিশের বাধায় সে মিছিল পন্ড হয়ে যায়। তবে এই বাধার মধ্যেও তারা পিকেটিং করেছেন। এসময় কয়েকটি গাড়িও ভাংচুর করেছে বাম নেতাকর্মীরা। ওই দিন সকাল পৌনে ৮ টায় শহরের ২নং রেল গেইট সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হরতালের সময় পুলিশি বাধার মুখে আন্দোলনকারীরা ভাঙচুর করেছেন কয়েকটি অটোরিকশা। সেই সাথে কয়েকটি গাড়িকেও বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছেন তারা। এসময় একটি গাড়িতে ভাঙচুরের দৃশ্য দেখা যায়। এসময় সকালে কিছুক্ষণের জন্য বাম জোটের নেতাদের দখলে ছিল নারায়ণগঞ্জের রাজপথ। পরবর্তীতে বেলা বাড়ার সাথে সাথে পুলিশের বাধায় বাম জোটের নেতারা রাজপথ থেকে সড়ে গিয়ে ২নং রেলগেইট এলাকায় হরতালের সমর্থনে সমাবেশ অব্যাহত রাখেন। তবে তা যান চলাচলে কোন ব্যাঘাত ঘটেনি।
উল্লেখ্য, ১ জুলাই থেকে সকল প্রকার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গত রবিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমকে জানান তারা। নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে গৃহস্থলীর রান্নার কাজে ব্যবহৃত একটি চুলার মাসিক বিল ৭৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৯২৫ টাকা করা হয়েছে। একই সাথে দুই চুলার বিল ৮০০ টাকা থেকে ৯৭৫ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে। বাসাবাড়ির গ্যাসের পাশাপাশি যানবাহনে ব্যবহার করা গ্যাসের দামও বেড়েছে। সিএনজি গ্যাসের দাম প্রতিঘনফুটে ৪০ টাকা থেকে ৪৩ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে।তবে গ্যাসের এই দাম বৃদ্ধিকে মেনে নিতে পারছে না সচেতন নাগরিক সমাজ। সেই সাথে বামদলগুলোও গ্যাসের এই মূল্যবৃদ্ধি মেনে নিতে পারছে না। যার সূত্র আধাবেলা হরতালের ডাক দেয়।
বাম নেতাকর্মীদেও মতে,গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে জনজীবনে নতুন করে দুর্ভোগ নেমে আসবে। বেড়ে যাবে জীবনযাত্রার ব্যয়। এতে শিল্পোৎপাদন খরচ বাড়বে, বিশেষ করে সঙ্কটে পড়বে পোশাক ও বস্ত্র খাত। পরিবহন খাতে ভাড়া নিয়ে নতুন করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। দেশব্যাপী অর্ধদিবস হরতালের সমর্থনে গনসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাম গণতান্ত্রিক জোট নারায়ণগঞ্জ জেলা সহ বাম ঘরানার বিভিন্ন জোট সংগঠনগুলো এই হরতালের ডাক দিয়ে মাঠে ছিল। গত কয়েকদিন নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন জায়গায় চলে সভা সমাবেশ। হরতালের দিনও তারা শহরের বিভিন্ন জায়গায় মিছিল মিটিং করেছে।